ঢাকা,শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ইসির হারানো ল্যাপটপে ‘রোহিঙ্গাসহ ৫৫ হাজার ভুঁয়া ভোটার’

চকরিয়া নিউজ ডেস্ক ::
নির্বাচন কমিশনের হারিয়ে যাওয়া কয়েকটি ল্যাপটপ দিয়েই রোহিঙ্গাসহ ৫৫ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ‘হারিয়ে’ যাওয়া সাতটি ল্যাপটপের জন্য থানায় মামলা, জিডি করা হলেও একটি ল্যাপটপের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি কমিশনের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে।

এ ঘটনায় অনুসন্ধান শেষে দুদক বুধবার চট্টগ্রাম জেলার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমানে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক খোরশেদ আলমসহ চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এ সংস্থাটির উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় খোরশেদ আলম ছাড়াও রামু উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজুল ইসলাম, অফিস সহায়ক রাসেল বড়ুয়া ও টেকনিক্যাল এক্সপার্ট মোস্তফা ফারুককে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী শরীফ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ‘হারিয়ে’ যাওয়া একটি ল্যাপটপসহ কয়েকটি ল্যাপটপ ব্যবহার করে ৫৫ হাজার ৩১০ জনকে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
“যাদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা ভোটার। আবার কিছু বাঙালিকে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।” মোট কয়টি ল্যাপটপ ব্যবহার করা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কমিশনের ল্যাপটপগুলোর আইডি নম্বর পরিবর্তন করা যায়। আমরা কয়েকটি ল্যাপটপ পেয়েছি যেগুলোতে একাধিক আইডি নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে।”

২০১৫ সালের আগে আরও কী পরিমাণ লোক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সর্বোপরি কয়টি ল্যাপটপ এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সেটি তদন্তসাপেক্ষে বলার বিষয়, বলেন দুদক কর্মকর্তা শরীফ।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, Dell Latitude 630, Service Tag Number-GYSPSIS- 4214 নম্বর ল্যাপটপটিসহ বেশ কিছু মালামাল ২০১৫ চালানপত্র ও প্রাপ্তিস্বীকার পত্রের মাধ্যমে গ্রহণ করে মোস্তফা ফারুক মিরসরাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে যান ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য। পরবর্তীতে সেগুলো মিরসরাই থেকে পুনরায় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তৎকালীন অফিস সহায়ক ও বর্তমানে রামু উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান সেগুলো গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ল্যাপটপটি বিভিন্ন উপজেলায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও সর্বশেষ অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কিন্তু দায়িত্ব থাকার পরও মাহফুজুর রহমান ও রাসেল বড়ুয়া ল্যাপটপটি না পাওয়ার বিষয়টি ঊধর্বতন কর্মকর্তাদের জানায়নি এবং তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খোরশেদ আলমও সেটি উদ্ধারের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এছাড়া কমিশনের আরও সাতটি ল্যাপটপ হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রাঙামাটির কোতোয়ালি, কাপ্তাই ও চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানায় মামলা ও সাধারণ ডায়েরি করা হলেও একটি ল্যাপটপটির বিষয়ে থানায় কোনো মামলা কিংবা জিডি করেনি কেউই।
পরবর্তীতে রোহিঙ্গাসহ ৫৫ হাজার ৩১০ জন লোককে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি ল্যাপটপের সাথে এ ল্যাপটপটিও ব্যবহার করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, বন্দুকযুদ্ধে নিহত রোহিঙ্গা ডাকাত নুরুর কাছ থেকে স্মার্ট কার্ড পাওয়া যাওয়ার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে খোরশেদ আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হলেও খোরশেদ আলম ‘হারিয়ে’ যাওয়া ল্যাপটপটির বিষয় এড়িয়ে যান এবং হারানোর বিষয়ে কাউকে দোষারোপও করেনি।
ঘটনার সময় খোরশেদ আলম দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকায় তিনি এবং অপরাপর কর্মচারীদের বাঁচাতে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেছেন বলেও দুদক মনে করে। এদিকে রোহিঙ্গা দম্পতিকে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় নির্বাচন কমিশনের তিন কর্মচারী ও দুই রোহিঙ্গাসহ সাত জনের বিরুদ্ধে আলাদা একটি মামলা করেছে দুদক। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম- ২ এ সংস্থাটির উপ- পরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
রোহিঙ্গাদের ভোটার করায় জড়িত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রামে ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন (সর্বডানে), তার বন্ধু বিজয় দাশ ও বিজয়ের বোন সীমা দাশকে সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় নির্বাচন কমিশনের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন, নূর আহম্মদ, সাবেক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নঈম উদ্দিন, ওবাইদুল্লাহ, শামসুর রহমান, ফয়াজ উল্লাহ ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয় ফয়াজ উল্লাহ ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনকে কক্সবাজার সদর উপজেলার মাধ্যমে ভোটার না হলেও আসামি জয়নাল আবেদীন চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার নির্বাচন কার্যালয়ে বসে তাদের ডেটা তৈরি করে। আর নঈম উদ্দিন কক্সবাজারে বসে সেগুলো অবৈধভাবে কক্সবাজার সদর উপজেলা কার্যালয় থেকে সার্ভারে আপলোড দিয়েছেন। অন্য দুই আসামি ওবাইদুল্লাহ ও শামসুর রহমান এ দম্পতিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে নিয়ে এসেছিলেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

পাঠকের মতামত: